Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

দেশি খেজুরের চাষ সম্প্রসারণ

দেশি খেজুরকে কেউ কেউ বুনো বা জংলি খেজুর নামে ডাকেন। কেননা এটা কেউ চাষ করে না, জঙ্গলের গাছ। এজন্য হয়তো এর ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে Wild Date Palm. দেশি খেজুর এ দেশের একটি অন্যতম প্রাচীন ফল। এ দেশেই উৎপত্তি, এ দেশেই বিস্তার। উদ্ভিদতাত্ত্বিক নামের সিলভেসট্রিস ল্যাটিন শব্দের অর্থই হলো জংলি। এ দেশের বন জঙ্গলেই গাছটি প্রধানত জন্মে থাকে। সাধারণত পতিত অনুর্বর জমিতে, বাঁধের ধারে, পুকুর পাড়ে, জমির আইলে, বাড়ি ও বাগানের চারদিকে, পথের দুই পাশে সারি করে খেজুর গাছ লাগানো হয়। তবে তা ফলের জন্য নয়, রসের জন্য। গাছের মিষ্টি রস জ্বাল দিয়ে তা থেকে গুড়পাটালি তৈরি করা হয়। এ দেশে খেজুরকে গুড় উৎপাদনকারী ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শীতের দিনে নলেন গুড়ের স্বাদ সবার কাছেই লোভনীয়। খেজুর যেহেতু অন্যান্য ফসলের মতো ব্যাপকভাবে চাষ করা হয় না, বসতবাড়ি, মাঠ, রাস্তার ধারে জন্মে। তাই ঠিক কতটুকু জমিতে খেজুরের আবাদ হচ্ছে তার হিসাব কষা মুশকিল। বিগত ২০১৬-১৭ সালে এ দেশে মোট খেজুর রসের উৎপাদন ছিল ১৬৯০৫৬ টন। মোট ৫১৩২ একর জমির খেজুর গাছ থেকে তা আহরিত হয়েছিল বলে নিরূপিত হয়েছে। একই বছরে দেশি খেজুরের উৎপাদন ছিল ৩৮৯৩৯ টন (বিবিএস ২০১৮)। সবচেয়ে বেশি খেজুর গাছ আছে রাজশাহী, নাটোর ও যশোরে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেশি খেজুরের চাষ সম্প্রসারণে ইতোমধ্যে একটি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
 

উদ্ভিদতাত্ত্বিক বর্ণনা
খেজুর গাছ অ্যারিকেসি পরিবারের Phoenix গণভুক্ত। ফিনিক্সগণের ১৪টি প্রজাতির গাছ পৃথিবীতে রয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্রজাতির ফসল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। Phoenix sylvestris (L.) Roxb. জড়ীন. প্রজাতি দেশি বা জংলি খেজুর ও Phoenix dactylifera L. খ. প্রজাতির গাছ আরবি খেজুর বা সৌদি খেজুর নামে পরিচিতি। প্রথমোক্ত প্রজাতির গাছ রস ও দ্বিতীয় প্রজাতির গাছ থেকে সুমিষ্ট ফল পাওয়া যায়। খেজুর গাছ একবীজপত্রী, এক লিঙ্গ বিশিষ্ট বৃক্ষ। অর্থাৎ পুরুষ ও মেয়ে গাছ আলাদা। মেয়ে গাছে ফল ধরে। শাখাহীন গাছ লম্বা হয় প্রায় ৪-১৫ মিটার। গাছের বাকল সদৃশ আবরণে পত্রবৃন্তের দাগ সব কাণ্ডকে জড়িয়ে থাকে। দেশি খেজুর গাছ বেশ দ্রুতবর্ধনশীল, শাখাবিহীন একটি কাণ্ড বিশিষ্ট গাছ। দেশি খেজুর গাছের গোড়াটা থাকে মোটা ও স্তূপের মতো শিকড় থাকে। কাণ্ডে পাতা ঝরে যাওয়ার পরও পত্রখোলের ভিত্তি অংশ কাণ্ডের সাথে লেগে থাকে যা খেজুর গাছকে বাড়তি সৌন্দর্য দান করে। পাতা পক্ষল, দণ্ডের দুই দিকেই হয়, অগ্রভাগ সুচাল, গোড়ায় তীক্ষ শক্ত কাঁটা। গাছের মাথায় পত্রগুচ্ছ নারিকেল-সুপারি গাছের মতো জন্মে। চৈত্র মাসে ফুল ফোটে। কাঁদিতে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল ফোটে। পুরুষ ফুল সাদা ক্ষুদ্রাকার। ফল হয় গ্রীষ্মকালে। ফল প্রায় ডিম্বাকৃতি, হলুদ রঙের, লম্বায় প্রায় ২.৫ সেন্টিমিটার। ভেতরে হালকা বাদামি রঙের একটি বীজ থাকে। বীজের ওপরে পাতলা আবরণের মতো শাঁস থাকে। কাঁচা শাঁস কইষট্যা-নোনতা। কিন্তু পাকলে তা বেশ মিষ্টি হয়। পাকা খেজুরের রঙ লালচে বাদামি থেকে খয়েরি হয়। পাকা খেজুর গ্রাম বাংলার শিশুদের কাছে খুব প্রিয়। বীজ দিয়েই খেজুরের বংশবৃদ্ধি হয়।

 

উৎপত্তি ও বিস্তার
দেশি খেজুর গাছের বিস্তৃতি পূর্ব এশিয়া, বিশেষ করে হিমালয়ের পশ্চিম থেকে শুরু করে ভারতবর্ষ থেকে নেপাল ও মিয়ানমার পর্যন্ত।
খেজুর গাছ বিক্ষিপ্তভাবে এ দেশের প্রায় সর্বত্রই জন্মে। এমনকি সুন্দরবন তথা উপকূলীয় অঞ্চলেও খেজুরের গাছ দেখা গেছে। তবে বেশি ও ভালো খেজুর গাছ জন্মে যশোর, নাটোর, রাজশাহী ও ফরিদপুর জেলায়।

 

ব্যবহার
দেশি খেজুরকে চিনি বা গুড় উৎপাদনকারী ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খেজুর গাছের প্রধান ব্যবহার রস ও গুড় উৎপাদন করা। তবে এর ফলও খাওয়া যায়। দেশি খেজুুরের ফল খুব নিম্নমানের হওয়ায় তা ফল হিসেবে অনেকেই খায় না। দেশি খেজুরের ফলের শাঁস পাতলা, বিচি বড়, পাকা ফলের সংরক্ষণ ক্ষমতা খুবই কম। তবু পাকা ফলের সুমিষ্ট গন্ধ ও মিষ্টি স্বাদ অনেককেই আকৃষ্ট করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের। খেজুরের রস থেকে চোলাই মদ বা বিয়ার তৈরি করা যায়। স্থানীয়ভাবে তৈরিকৃত এই মদকে ‘তাড়ি’ বলা হয়। বিশেষ পদ্ধতিতে গাছের মাথার দিকে কাণ্ড চেঁছে রস নামানো হয়। কোথাও কোথাও না ফোটা পুষ্পমঞ্জরির ডাটি কেটে রস নামানো হয়। রসের উৎপাদন গড়ে গাছপ্রতি ৫ লিটার। গাছের স্বাস্থ্য ভালো হলে রসের পরিমাণ আরো বেশি পাওয়া যায়। শীতকালে খেজুরগাছ থেকে রস পাওয়া যায়। শীতের সকালে খেজুরের টাটকা রস পান পল্লী বাংলার আবহমানকালের ঐতিহ্য। খেজুর গাছ কেটে রস নামানোর আগে গাছের পাতা ছাঁটাই করা হয়। এসব পাতার ফলক রোদে শুকিয়ে খেজুর পাতার নকশাদার পাটি ও হাতব্যাগ বা আরও কিছু কারুপণ্য বানানো হয়। খেজুরের পাতা দিয়ে গ্রাম বাংলায় পাটি, মাদুর, ঝুড়ি ইত্যাদি বানানো হয়। খেজুর গাছের কা- গৃহনির্মাণ সামগ্রী হিসেবে গ্রামে অনেকেই ব্যবহার করেন। ছোট নালা বা খালের ওপর সাঁকো বানানোয় এর কাণ্ড ব্যবহৃত হয়। কোনো কোনো স্থানে খেজুর গাছকে শোভাবর্ধক গাছ হিসেবে উদ্যানে লাগানো হয়। খেজুর ফল হৃদরোগ, জ্বর ও পেটের পীড়ায় উপকারী। ফল বলবর্ধক। ফলে প্রচুর লৌহ জাতীয় খনিজ উপাদান আছে।

 

আবহাওয়া ও মাটি
শুষ্ক থেকে আর্দ্র যে কোনো স্থানে দেশি খেজুর গাছ জন্মাতে পারে। দেশি খেজুর গাছের জন্ম ও বৃদ্ধি লাভ সেখানে বেশি ভালো হয় যেখানে দিনের তাপমাত্রা ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থাকে। তবে তাপমাত্রা কমে গেলেও খেজুর গাছ বেঁচে থাকতে পারে। তরুণ গাছ হিমাঙ্কের কাছাকাছি তাপমাত্রায় ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খেজুর গাছের জন্য বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৪০০-৭০০ মিলিমিটার দরকার হয়। খেজুর গাছের জন্য রোদেলা জায়গা চাই। বিভিন্ন ধরনের মাটিতে খেজুরগাছ জন্মাতে পারে। তবে মাটি অবশ্যই সুনিষ্কাশিত হতে হবে। তা না হলে গাছ টিকবে না। মাটির অম্লমান বা পিএইচ ৫.৫-৭.৫ হলে ভালো। লবণাক্ত মাটিতে খেজুর গাছ ভালো হয়।

 

চারা তৈরি
বীজ থেকে দেশি খেজুরের চারা তৈরি করা যায়। ভালোভাবে পাকা ফল গাছ থেকে পেড়ে কয়েক দিন রেখে দিলে ফল আরও পেকে খোসা ও শাঁস নরম হয়ে পচে যায়। তখন ফলগুলো চটকে পানিতে ধুয়ে নিলে বিচি পাওয়া যায়। সেগুলো পলিব্যাগে বা বীজতলায় বুনে চারা তৈরি করা যায়। গ্রীষ্মকালে শেষে চারা তৈরি করা যায়। বীজ গজাতে ২-৩ মাস লাগতে পারে।

 

চারা রোপণ
বাংলাদেশে অধিকাংশ খেজুরগাছ লাগানো হয় রাস্তার ধারে বা তৃণভূমিতে। বাণিজ্যিকভাবে বা বাগান আকারে খুব একটা খেজুরের চাষ করা হয় না। প্রধানত প্রাকৃতিকভাবেই এ দেশে খেজুরগাছ জন্মে থাকে। তবে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু গাছ লাগানো হয়। স্বভাবতই এসব গাছের কোনো পরিচর্যা করা হয় না বা করলেও খুব সামান্য যত্ন নেয়া হয়। পাখিরাই মূলত দেশি খেজুর গাছের প্রধান বিস্তারক। ফল খেয়ে সেসব ফলের বীজ পাখিরা দূরবর্তী স্থানে বিষ্ঠা ত্যাগের মাধ্যমে বিস্তার ঘটায়। কাঠবিড়ালিও এর বিস্তারক। বর্ষাকালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া এসব বীজ থেকে প্রাকৃতিকভাবে খেজুরের চারা জন্মায়। বাংলাদেশে কৃষকরা সাধারণত চারা তৈরি করে না। তারা প্রাকৃতিকভাবে জান্মানো খেজুরের চারা তুলে এনে রোপণ করে। সাধারণত তারা ১৫-৪০ সেন্টিমিটার লম্বা ১-২ বছর বয়সী চারা তুলে এনে বাগানে, বাড়ির আঙিনায়, পতিত জমিতে বা রাস্তার ধারে লাগায়। সম্প্রতি নার্সারিতে চারা উৎপাদনের মাধ্যমে কোনো কোনো এলাকায় খেজুর চাষ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে।


খেজুরের চারা রোপণের জন্য আগেই গর্ত করে সার গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরে রাখতে হবে। দেখা গেছে, রোপণের সময় গর্তে পরিমাণ মতো জৈব ও রাসায়নিক সার দিলে পরবর্তীতে সেসব গাছ থেকে বেশি রস পাওয়া যায়। সবদিকে ৫০-৭৫ সেন্টিমিটার আকারের গর্ত খুঁড়ে প্রতি গর্তের মাটির সাথে ৫-৭ কেজি গোবর সার, ৫০০ গ্রাম টিএসপি ও ৩০০ গ্রাম এমওপি সার মাটির সাথে মেশাতে হবে। সার মাটি দিয়ে গর্ত ভরার সপ্তাহখানেক পর গর্তের মাঝখানে চারা রোপণ করতে হবে। জমির আইলে চারা লাগাতে হলে আইলের প্রশস্ততা বুঝে গর্ত করে জৈবসার দিয়ে চারা লাগাতে হবে। কৃষকরা বাগানে ঘন করে চারা লাগায়। তবে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪-৫ মিটার দেয়া ভালো। চারা অবশ্যই সারিতে রোপণ করা উচিত।


আগাছা ও সার ব্যবস্থাপনা
খেজুর বাগানে প্রচুর আগাছা জন্মে। বিশেষ করে উলু ঘাস। এসব আগাছা পরিষ্কার না করলে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন কমে যায়। এজন্য চারা রোপণের ১ মাস পর চারার গোড়া থেকে খানিকটা দূর পর্যন্ত আগাছা পরিষ্কার করে মাটি কুপিয়ে সেখানে গাছপ্রতি ১৫০-২০০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার দিতে হবে। বর্ষার পর সার দিলে সেসব গাছের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে। চারা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে পরের বছর থেকে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সারের পরিমাণ গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাড়াতে হবে। গ্রামে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাত্র সিকি ভাগ কৃষক শুধু বছরে একবার গাছের গোড়ার কিছুটা দূর দিয়ে মাটি খুঁড়ে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করেন। এতে তাদের অভিজ্ঞতা হলো, ইউরিয়া সার দিলে সেসব গাছে রসের উৎপাদন বাড়ে।

 

বালাই ব্যবস্থাপনা
দেশি খেজুর গাছ অনেক ধকল সইতে পারে। সাধারণত এ গাছে তেমন বালাইয়ের আক্রমণ হয় না। তবে কখনো কখনো গাছে কিছু পোকা ও রোগের আক্রমণ দেখা দেয়, যার ফলে গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে খেজুর পাতায় খোস পোকার আক্রমণ ঘটে। সাদা ও লাল দুই ধরনের খোস পোকা বা স্কেল ইনসেক্ট আক্রমণ করে। অল্প বয়সের খেজুরগাছ সাদা স্কেল পোকা (Parlatoria blanchardii) দ্বারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে গাছের বয়স ২-৮ বছরের মধ্যে সাদা খোস পোকার আক্রমণ হলে গাছের খুব ক্ষতি হয়। দানা দানা শক্ত সাদাটে রঙের চাকতি বা খোসের মতো পোকা পাতায় অনেকগুলো একসাথে কলোনি করে থাকে ও পাতা থেকে রস চুষে পাতাকে বিবর্ণ, দুর্বল ও শেষে মেরে ফেলে। পূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চা খোস পোকা উভয়ই পাতা থেকে রস চুষে খায়। তীব্র আক্রমণে পাতা হলদে হওয়ার পর মরে বাদামি হয়ে যায়। পাতার উভয় পিঠেই এরা আক্রমণ করে, তবে নিচের পিঠে বেশি থাকে। লাল খোস পোকাও (Phoenicococcus marlatti) একইভাবে ক্ষতি করে। এ পোকার রঙ গাঢ় গোলাপি বা লাল। এছাড়া গণ্ডার পোকা বা রাইনোসেরস বিটিল (Oryctes rhinoceros) খেজুর গাছের ক্ষতি করতে পারে। চকচকে কালো রঙের শক্ত দেহের এ পোকাদের গণ্ডারের শিঙের মতো শুঁড় আছে। পূর্ণবয়স্ক গণ্ডার পোকা খেজুর গাছের কচি পাতা খেয়ে সর্বনাশ করে। মাঝে মাঝে খেজুর পাতায় ছাতরা পোকার আক্রমণও দেখা যায়। এসব পোকা নিয়ন্ত্রণে অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। রোগের মধ্যে শিকড় পচা, হলদে মোজাইক, কৃমি রোগ, লিথাল ইয়েলোইং বা হলদে মরা, ব্রিটল লিফ ইত্যাদি রোগ গুরুত্বপূর্ণ। ছত্রাকজনিত রোগ হলে বোর্দো মিশ্রণ বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

 

রস আহরণ ও গুড় তৈরি
আবাহমান বাংলার শীতের এক অনন্য ঐতিহ্য খেজুরের রস। মরুদেশ আরবের খ্যাতি যেমন খেজুর দিয়ে, বাংলাদেশের খ্যাতি তেমন খেজুরের রস দিয়ে। এ দেশের প্রায় সব জায়গাতেই কম বেশি খেজুর গাছ আছে। তবে যশোরে পরিচিতি খেজুর গাছ দিয়ে। কথায় বলে ‘যশোরের যশ, খেজুরের রস’। অর্থাৎ যশোরের খ্যাতি খেজুর গাছ এবং খেজুরের রস দিয়ে। এমনকি যশোর জেলাকে প্রতীকী অর্থে কোথাও উপস্থাপন করার সময় সেখানে খেজুর গাছের ছবি যশোরের প্রতিনিধিত্ব করে।


সাধারণত চার বছর বয়সের পর থেকে খেজুর গাছের রস আহরণ শুরু হয় যখন গাছে ১২-১৫টি পাতা থাকে। খেজুর গাছ এক বিশেষ পদ্ধতিতে চেঁছে তা থেকে রস নামানো হয়। যারা খেজুর গাছ কেটে এই রস নামানোর পেশায় নিয়োজিত তাদেরকে বলে ‘গাছি’। শীতের মৌসুম শুরু হলেই গ্রামে গ্রামে গাছিরা প্রথমে খেজুর গাছের মাথার পাতা ও পাতার খোসা কেটে পরিষ্কার করে কয়েক দিন রেখে দেয়। তারপর গাছের মাথার একপাশ থেকে ধারালো এক প্রকার বিশেষ দা-এর সাহায্যে গাছের বাকল চেঁছে তোলে। এই দাকে বলে ‘গাছি দাও’। তবে পাতা কাটার জন্য ‘কাটু দাও’ ব্যবহার করা হয়। একটা ছোট্ট কাঠি গাছের সাথে আড়াআড়ি বেঁধে গাছিরা পা রেখে দাঁড়ায়, একে বলে ‘পাতুই কাঠি’।


গাছি তার কোমরে একগাছি রশির সাহায্যে তার পেছনে তালপাতার তৈরি এক ধরনের বিশেষ পাত্র বেঁধে রাখে। তাকে বলে ‘ঠুঙ্গি’। ঠুঙ্গির ভেতরে এসব দাও থাকে। রশির সাথে ঝুলানো থাকে কলসির মতো একটি মাটির ‘ঠিলা’। চেঁছে বাকল তোলার পর রস নামতে শুরু করে। তখন সেখানে দুপাশ থেকে চেঁছে ফেলা জায়গার নিচে অগভীর একটা খাঁজ কেটে তার মাঝখানে পেনসিলের মতো একটি কঞ্চি চেরা কাঠি পুঁতে দেয়া হয়। কাঠির নিচে বেঁধে দেয়া হয় রসের ঠিলা। একদিনে আহরিত রস এই ঠিলা থেকে সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত সপ্তাহে তিন দিন গাছ কাটা হয়। বিরতি দিয়ে সপ্তাহের প্রথমে যে রস নামানো হয় সেটাই সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের রস। একে ‘জিরান কাটের রস’ বলে, দ্বিতীয় দিনের রসকে বলে ‘দো কাটের রস’, তৃতীয় দিনের রসকে বলে ‘ঝরা রস’। প্রথমোক্ত রস থেকে ভালো মানের গুড় ও পাটালি তৈরি হয়। ঝরা রস থেকে হয় ‘তোয়াক গুড়’ ও ‘ঝোলা গুড়’। রস উনুনে জ্বাল দিয়ে ঘন করলে গুড় তৈরি হয়। জ্বাল দিয়ে ঘন করা গুড়কে পাত্রে ঢেলে ঠাণ্ডা করলে পাটালি হয়। পাত্রের আকার অনুসারে গুড়েরও বিভিন্ন নাম আছে। যদি সমতল পাতের মতো শক্ত গুড় হয় তাকে বলে পাটালি। যদি মাটির ছোট ছোট মুছিপাত্রে ঢেলে গুড় জমানো ও শক্ত করা হয় তাকে বলে মুছি পাটালি। ঠিলা বা মাটির কলসিতে ঢেলে নরম গুড় রাখলে তাকে বলে ঠিলার গুড়। জিরান রস থেকে উত্তম মানের গুড় তৈরি হয়।


ফল সংগ্রহ ও ফলন
সাধারণত গাছেই কাঁদিতে দেশি খেজুরের ফল পেকে ঝরে পড়ে, সংগ্রহ করা হয় না। সব ফল একসাথে পাকে না। কয়েক দিন ধরে পাকতে থাকে। ফল পাকার সময় গ্রীষ্মকাল। পাকা ফল পাখিরা খায়। ফল মাটিতে ঝরে পড়ে সেখানেই প্রাকৃতিকভাবে চারা তৈরি হয়। খাওয়ার জন্য ফলের রঙ সবুজ থেকে হলুদ হলে কাঁদির পাটি কেটে কাঁদিসহ সংগ্রহ করা হয়। ঘরে রেখে দিলে ২-৩ দিনের মধ্যে সেসব পরিপক্ব ফল পাকতে শুরু করে। পাকলে ফলের শাঁস নরম হয় ও লালচে মেরুন রঙ ধারণ করে। একটি গাছ থেকে ১০-২৫ কেজি ফল পাওয়া যায়, রস পাওয়া যায় ৫-৭ লিটার।

 

মৃত্যুঞ্জয় রায়
উপপরিচালক (এলআর), ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা, মোবাইল : ০১৭১৮২০৯১০৭, ই-মেইল : kbdmrityun@yahoo.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon